প্রকাশিত সময় : মে, ১৯, ২০২০, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 447 জনকরোনাভাইরাস সংক্রমণে দেশে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। এ পরিস্থিতির মধ্যেই উপকূলীয় এলাকায় ধেয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্ফান।
সোমবার রাত ৯টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, সুপার সাইক্লোন আম্ফান কেন্দ্রের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ২৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কোন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করা সুপার সাইক্লোন ম্যারি অ্যান থেকেও আম্ফান বেশি শক্তিশালী রূপ ধারণ করেছে। এমনকি স্মরণকালে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এতো শক্তি নিয়ে কোনো সুপার সাইক্লোন এগিয়ে আসেনি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হলো—সামাজিক ও শারিরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। আম্ফান চলাকালে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা না গেলে ঘূর্ণিঝড়ের পর করোনা সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে। করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষরা ঘূর্ণিঝড়ে ঘরবাড়ি, ফসল, মাছের খামার হারালে পরবর্তীতে এটি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় আশ্রয় কেন্দ্রে শারিরিক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের ক্ষেত্রে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানোর পাশাপাশি সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, উপকূলে ঝুঁকিতে থাকা ৫১ লাখ ৯০ হাজার মানুষের জন্য ১২ হাজার ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতের পাশাপাশি স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ২৪ টি মনিটরিং সেল, জেলা-উপজেলা ও মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। জানমাল উদ্ধারে ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মাঠে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নগদ টাকা, শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য, গোখাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, করোনা প্রতিরোধের প্রথম কাজ হলোলো সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। এটা সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ঘূর্ণিঝড় আসলে স্বাভাবিকভাবে উপকূলে থাকা মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সেখানে যেন শারিরিক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চি থাকে সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। তা না হলে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনা প্রতিরোধে সব জায়গার মতো সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে এটি নিশ্চিত করার জন্য বেশি সাইক্লোন সেন্টার করতে হবে। এককভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের কাজ নয়। এটি সম্মিলত কাজ এবং সম্মিলত প্রয়াস। সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এখন বিশেষ অবস্থা বিবেচনা করে সবাই মিলে অর্থাৎ জেলা প্রশাসন পু্লিশ সুপার, সিভিল সার্জন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোহসীন বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা পূর্বপ্রস্তুতি রেখেছি। সার্বক্ষণিক উপকূলীয় এলাকায় যোগাযোগ রাখছি। মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থবিধি মেনে মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে ও রাখা হবে। প্রত্যেকেরর জন্য প্রয়োজনীয় মাস্ক, চিকিৎসাসামগ্রীর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রমজান মাস হওয়ায় ইফতার ও সেহরি বিষয়টি নিশ্চিতসহ তাৎক্ষণিক যেন শিশুখাদ্য দেওয়া যায় সে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নগদ অর্থসহ পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুতরাখা, যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আসবেন তাদের মাস্ক ব্যবহার করা, দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে উপকূলীয় এলাকার জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র.রাইজিংবিডি
Facebook Comments