প্রকাশিত সময় : মে, ৩, ২০২০, ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 586 জনমহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে চলমান লকডাউনের মধ্যে যে সব শ্রমিক ঢাকার বাইরে থাকার কারণে কাজে যোগ দিতে পারেননি তাদের বেতন-ভাতার ৬০ শতাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শ্রমিক-মালিক ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় সভায় এমন সিদ্ধান্তকে সংশ্লিষ্ট সবাই সাধুবাদ জানালেও বাস্তবে বিপাকে পড়েছেন ঢাকার বাইরে অবস্থান করা পোশাক শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের দাবি, সরকার থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের ফোনে ঢাকায় আসার জন্য আদেশ দিচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বলা হচ্ছে, কাজে যোগদান না করলে চাকরি থাকবে না। শ্রমিকদের দাবি, কথা ও কাজে মিল নেই অনেক মালিক পক্ষের। তাই শ্রমপ্রতিমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসেও আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকে। ফলে জীবনের ঝুঁকি জেনেও ঢাকা আসছেন শ্রমিকরা।
এমন অভিযোগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, অনেক শ্রমিককে ফোন করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের ফোন করে বলা হয়েছে, না এলে চাকরি থাকবে না। ফলে শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে দলে দলে ঢাকা এসেছে। আমরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি।
যারা ঢাকায় নেই কিংবা ঢাকায় আসতে পারছেন না সেই সব শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ বেতন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইতে তিনি বলেন, এটা একপ্রকার আইওয়াশ। আপনারা পথে-ঘাটে অনেক শ্রমিকদের দেখেছেন দূর-দুরান্ত থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেছে। ফেরিতে বা বিভিন্ন টার্মিনালে এতো মানুষ কেন আসলো? চাকরি হারানো ভয় দেখিয়েছে বিধায় আতঙ্কিত হয়ে শ্রমিকরা ঢাকায় এসেছে। তাদের কথায় ও কাজে মিল নেই। আমরাও চাই কারখানা চালু হোক। তবে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচার অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির।
তিনি বলেন, ফোন দিয়ে ঢাকায় আসতে বলার তথ্য সঠিক নয়। বারবার বলা হচ্ছে যারা ঢাকার বাইরে আছে, গ্রামে আছে তাদের আসার প্রয়োজন নেই। এটা সরকার থেকে বলা হয়েছে। বিজিএমইএ থেকেও বারবার বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বলা হয়েছে বেতন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের কাছে চলে যাবে। তারপরও এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তিনি বলেন, ৬০ শতাংশ বেতনের কথা শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথসভায় নির্ধারণ করা হয়েছে। একেকভাবে কেউ করেনি। সেখানে শ্রমিক নেতারা ও সংগঠনের নেতারা বসে চূড়ান্ত করেছে। এটা না মানার বিষয় আসে না। অনেক শ্রমিক নেতা ছিলেন ওই মিটিংয়ে।
মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ২৯ এপ্রিল শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান গণমাধ্যমকে বলেন, উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষ আপাতত আমাদের দুটি সিদ্ধান্ত- মে মাসের মধ্যে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই হবে না, লে-অফ হবে না এবং এপ্রিল মাসে কাজে যোগদান করে যেসব শ্রমিক কাজ করেছেন তারা পুরো বেতন ভাতাদি পারেন। যারা বর্তমান পরিস্থিতির কারণে করতে পারেননি, তারা বাড়ি বসে বেতন ভাতার ৬০ শতাংশ পাবেন।
অন্যদিকে ঢাকার বাইরে অবস্থানরত পোশাক শ্রমিকদের এখন ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই, তাদের বেতন পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তহবিল থেকে গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ২ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে। আর তহবিলের অর্থ দিয়ে কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।
এরই ধারবাহিকতায় ব্যাংকিং চ্যানেলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংক হিসাব খুলতে বলা হয় শ্রমিকদের। বেতন-ভাতা পেতে নতুন করে প্রায় ২৬ লাখ শ্রমিক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খুলেছেন বলে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র.রাইজিংবিডিকে
Facebook Comments