প্রকাশিত সময় : মে, ৯, ২০২০, ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 221 জনকরোনার সংক্রমণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সবার প্রথমে প্রয়োজন সচেতনতা, সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা। হ্যাঁ, এমন ঘটতেই পারে, ঘুম থেকে উঠে আপনি জানতে পারলেন, পাশের ফ্ল্যাটে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না যাতে রোগী বা রোগীর পরিবার বিব্রত বোধ করেন।
রাজধানীর অনেক বাড়িওয়ালা করোনা আক্রান্ত ভাড়াটিয়ার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন- এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এটি দুঃখজনক এবং অমানবিক। মনে রাখতে হবে, আমরা একটি মহামারির কাল অতিক্রম করছি। এখন প্রয়োজন সর্বোচ্চ মানবিকতার প্রকাশ। কারণ শেষ পর্যন্ত মানুষ মানুষের কাছেই আশ্রয় চাইবে। বিষয়টি এমন নয়, সেই ভাড়াটিয়াকে তাড়িয়ে দিলেই আপনি বা আমরা করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবো। তাহলে করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনভাবে একটি পরিবারকে আইসোলেশনে রাখতে পারলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এ প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন সিটি হাসপাতাল লিমিটেডের ডায়াবেটিস কেয়ারের প্রধান ডা. এজাজ বারী চৌধুরী।
* পাশের ফ্ল্যাটে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে শুনে অন্য কোথাও যাওয়ার চিন্তা করবেন না। কারণ, যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তার শরীরে জীবাণু ঢুকেছে ৫-৭ দিন আগে। তখন থেকেই তার মাধ্যমে অন্যদের শরীরেও জীবাণু ঢুকতে পারে। সুতরাং, যার শরীরে ইতোমধ্যে জীবাণু ঢুকে গেছে তিনি অন্য কোথাও যাওয়া মানে, সেই জীবাণু অন্যখানে বহন করে নিয়ে যাওয়া।
* আপনি যদি গত ৫-৭ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসে থাকেন, যেমন: একসঙ্গে লিফটে ওঠা-নামা, দোকানে যাওয়া, নিজেদের মধ্যে টাকা লেনদেন করা, একসঙ্গে সিঁড়ির কোণায় বা বেজমেন্টে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া, ধূমপান করা, ইফতার বা অন্য খাবার আদান-প্রদান করা ইত্যাদি, তাহলে আপনাকেও পরিবারসহ ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। সুতরাং শুনেই পালানোর চেষ্টা করবেন না। তাহলে অবশ্যই এটি হিতে বিপরীত হবে। বিষয়টি বিল্ডিংয়ের অন্যদের সুস্থতা এবং রোগ না ছড়ানোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
* আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের প্রতি সবাই সাহায্য, সহযোগিতা এবং সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। আপনার সুস্থতার জন্যই এটি জরুরি। লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন ওই পরিবার সঠিকভাবে আইসোলেশনে থাকতে পারে এবং শক্ত মনোবল নিয়ে করোনা মোকাবিলা করতে পারে।
আরো পড়ুন: করোনা পজিটিভ হলে ঘরে যেভাবে চিকিৎসা করবেন
* আক্রান্ত পরিবারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, খাবার এবং ওষুধ তাদের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। তবে হাতে হাতে নয়। এসব কেনাকাটার বিল যা হবে, সেই টাকা আপাতত বিল্ডিংয়ের অন্যরা পরিশোধ করবেন। অথবা বিকাশে লেনদেন করবেন। কেননা, আক্রান্ত পরিবারের হাতের সংস্পর্শে থাকা টাকার মাধ্যমে ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
* আক্রান্ত পরিবার ময়লা বড় পলিথিনে মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে দরজার বাইরে রাখবেন। যিনি ময়লা ফেলার দায়িত্বে আছেন, তিনি প্রথমে সেই ময়লার ব্যাগে জীবাণুনাশক স্প্রে করবেন। তারপর আরেকটি বড় পলিথিনে ওই ব্যাগটি ঢুকিয়ে, মুখ আটকে নিয়ে যাবেন।
* আক্রান্ত পরিবারের ফ্ল্যাটের মেইন দরজার নব, কলিংবেল সুইচ, দুই ফ্ল্যাটের মধ্যকার লবি এবং কমন স্পেস প্রতিদিন কয়েকবার জীবাণুনাশক দিয়ে মুছতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক।
* বিড়ালের করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ শুধু মানুষ না, আক্রান্ত বিড়ালের মাধ্যমেও করোনা ছড়ায়। সুতরাং বিল্ডিংয়ে বিড়াল থাকলে সেগুলোর অবাধ বিচরণ বন্ধ করতে হবে।
* একইরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং সহযোগিতা কোয়ারেন্টাইনে থাকা পরিবারগুলোর জন্যও নিশ্চিত করতে হবে। যারা গত এক সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টাইনে থাকা নৈতিক দায়িত্ব।
ডা. এজাজ বারী চৌধুরীর ভাষ্য অনুযায়ী, যখন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন, আইসোলেশনে গিয়েছেন এবং অন্য সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছেন, তখন অন্তত তার কাছ থেকে অন্যদের আক্রান্ত হবার আশঙ্কা কম। আসুন আতঙ্কিত না হয়ে আমরা সুবিবেচক এবং দায়িত্বশীল আচরণ করি। এর মাধ্যমেই কল্যাণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
Facebook Comments