প্রকাশিত সময় : মে, ১৫, ২০২০, ১২:৩৭ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 915 জনপ্রবাসীদের উপার্জনই দেশে অবস্থানরত পরিবারের একমাত্র ভরসা। করোনাভাইরাসের দুর্যোগে প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে না পারায় দেশে পরিজনরা অর্থ সংকটে পড়েছেন। বিদেশে প্রবাসীদেরদের সংকট বৃদ্ধির সাথে দেশে পরিবারগুলোর সংকট বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে প্রবাসীদের পরিবার-পরিজনদের না খেয়ে থাকার পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রবাসে বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। যার মধ্যে প্রায় ৯০ লাখ বৈধ। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের বসবাস গ্রামে। যাদের ৮৫ ভাগ পরিবার প্রবাসীদের রোজগারের উপর নির্ভরশীল। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশি^ক মহামারির ফলে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠাতে পারছেন না।
ফলে এসব পরিবার আর্থিকর্ সংকটে পড়েছে। নিত্যদিনের খরচ কমাতে হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে যাওয়ার সময় প্রবাসীদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আত্মীয় স্বজনের কাছে থেকে ধার-দেনা করে বিদেশে গেছেন। বিদেশ থেকে তারা অর্থ না পাঠাতে না পারায় দেশে এ সব ধারদেনা পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে অর্থ সংকটের পাশাপাশি এক ধরণের সামাজিক বৈরি অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারি অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সংকট তৈরি হবে। নোয়াখালীর জাকির হোসেনের পরিবার এমন একটি প্রবাসী পরিবার। জাকির হোসেন বিদেশে যাওয়ার সময় স্থানীয় একটি এনজিও এর কাছে থেকে টাকা ঋণ নেন। জাকির হোসেন মার্চ পর্যন্ত টাকা পাঠাতে পেরেছেন। এ টাকা দিয়ে ধার-দেনা পরিশোধের পাশাপাশি পরিবারের খরচ চালিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের আঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে জাকির হোসেন আর দেশে টাকা পাঠাতে পারেননি। ফলে পরিবারের খরচ ও দেনা পরিশোধ করতে পারছেন না। দেশে জাকির হোসেনের পরিবার বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এমন সংকটের খবর পাওয়া গেছে কুমিল্লার চোদ্দগ্রামের বিল্লাল হোসেনের পরিবারেও।
ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাসের আঘাতে বিশ্বজুড়ে উৎপাদন, বিপনন ও সেবার সব ধরণের কাজ-কর্ম বন্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে রোজগার। ঘরে বন্দী জীবন যাপন করতে হচ্ছে প্রবাসীদের। কোথাও কোথাও প্রবাসীদের ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। দেশ-পরিবার পরিজন থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বিদেশ বিভূঁইয়ে এক মানবেতর জীবন যাপন করছে। কারো কারো ঘরে খাদ্য পর্যন্ত নেই। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণে তারাও কর্মীদের দেখ্-ভাল করছে না। সে সাথে রয়েছে রয়েছে ছাটাইয়ের ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার ঘা।
প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ দেশে ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে। এ সব মানুষকে ইতোমধ্যে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। এর বাইরে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন বেকার জীবন যাপন করছে। প্রবাসীদের স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন তাদের খাদ্য পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ সব দেশে বাংলাদেশের দুতাবাস ও মিশনগুলো খাদ্য পৌছে দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ৩০টি এ রকম দেশে ৯ কোটির টাকার ত্রান সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
ফলে তাদের জীবন রক্ষাই প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় তারা আগের মত দেশে টাকা পাঠাতে পারছে না। মার্চ এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমান এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পল্লী অঞ্চলে। দেশের যে সব এলাকায় প্রবাসীদের হার বেশি সে সব এলাকাতে অর্থ সংকটে পড়েছে বেশি। কোন কোন বাড়িতে পরিমান নিত্য দিনের খাদ্য কেনার হার কমিয়ে দিয়েছে।
রামরুর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের প্রবাসীরা অধিকাংশ পল্লী অঞ্চলের। এ সব মানুষ জীবন ৮৫ ভাগ প্রবাসী আয়নির্ভর। মাত্র ১৫ ভাগ কৃষিনির্ভর। রামরুরর প্রতিষ্ঠাতারা সভাপতি অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দেওয়ার কারণে এ সব পরিবার মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়েছে।
তারা এখন বেশি দামের আমিষ জাতীয় খাদ্য কমিয়ে দিয়ে কম দামের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য দিয়ে জীবন নির্বাহ করা শুরু করেছে। করোনা অভিঘাত প্রলম্বিত হলে তারা হয়তো সন্তানদের লেখাপড়া খরচ কমিয়ে দেবে। অন্যান্য যে সব উৎপাদনমুখি খাতে অর্থ ব্যয় করতো সেগুলোও কমিয়ে দেবে। তখন পল্লীর জীবন ও অর্থনীতিতে বড় ধরণের ক্ষতের সৃষ্টি করবে।
Facebook Comments