প্রকাশিত সময় : জুন, ২৯, ২০২০, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 1154 জনপ্রতিবেদক পলাশ হোসাইন: মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চান -দাদা ভাই মাথায় ধবল চুল। মুখে লম্বা দাড়ি। ছবিটা আগের মতোই আছে। চার দশকে বাংলাদেশের রাজনীতির মানচিত্রে বদল হয়েছে অনেক। বন্ধু শত্রু হয়েছেন। শত্রু হয়েছেন বন্ধু। কিন্তু একটি চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তিনি সেই আগের মতোই আছেন। সিরাজুল আলম খান। রাজনীতির রহস্য-পুরুষ। ‘দাদাভাই’ নামেই যার পরিচয়। হয়তো রহস্য তিনি ভালোবাসেন। যে কারণে আজও কুয়াশার চাদরে ঢেকে রেখেছেন নিজেকে। তবে একটি ব্যাপারে রহস্য রাখেননি তিনি। কাছের মানুষের কাছে বলেছেন, নিজের জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা। শেষ ইচ্ছার ব্যাপারে কোন রহস্য রাখলেন না রাজনীতির রহস্যপুরুষ সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই)। “মায়ের কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চান”। সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ই জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন, গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্থানীয় স্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করে চলে যান বাবার কর্মস্থল খুলনায়। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ’৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। থাকতেন ফজলুল হক হলে। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তার পক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়া সম্ভব হয়নি। কনভোকেশন মুভমেন্টের কারণে ’৬৩ সালের শেষদিকে গ্রেপ্তার হন। ’৭৬ সালে জিয়ার আমলে আবার গ্রেপ্তার এবং ’৭৯ সালে মুক্তি পান। ’৯২ সালে বিদেশ যাবার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪শে মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে ৪ মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান। ৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় স্কুলের ছাত্র থাকাকালে তিনি প্রথম মিছিলে যান। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ’৬১ সালে ছাত্রলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক হন। ’৬৩ সালে সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে বাঙালিদের স্বাধীন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ’৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে নিউক্লিয়াস গড়ে উঠে তিনিই ছিলেন তার মূল উদ্যোক্তা।
Facebook Comments