প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৮, ২০২০, ০৬:৩৮ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 606 জনআন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সতর্ক করে বলেছে, শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা না দিলে ভাইরাসের দ্বিতীয় দফা ঢেউ আসতে পারে। আজ মঙ্গলবার সংস্থাটির জেনেভা অফিস থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়।
দেশে দেশে লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করার চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আইএলও সরকারগুলোর প্রতি কর্মক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে নিয়োগকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে ও সংলাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করে আইএলও।
বিবৃতিতে আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, ‘আমাদের পুরো কর্মী বাহিনীর সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য আজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবের মুখে আমরা কীভাবে আমাদের কর্মীদের সুরক্ষা দিচ্ছি, আমাদের সম্প্রদায়গুলো কতটা নিরাপদ এবং আমাদের ব্যবসায়গুলো কতটা স্থিতিশীল, তার ওপর এই মহামারির প্রভাব নির্ভর করছে।’
গাই রাইডার বলেন, ‘কেবল পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শ্রমিক, তাঁদের পরিবার এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের জীবন রক্ষা করতে পারি। এতে কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা সম্ভব হবে।’
এ জন্য তিনি স্বাস্থ্যকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিত লোকজনের যথাযথ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন।
ওই বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিআইনেন বলেন, ‘যেহেতু কিছু কিছু শিল্প ধীরে ধীরে কার্যক্রম শুরু করছে, আইএলও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিরাপদে কাজে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে একটি তিন ধাপের কৌশল তৈরি করেছে। প্রথম পদক্ষেপ হলো নিয়োগকারী ও শ্রমিকের মধ্যে আলোচনার ওপর ভিত্তি করে কাজের জন্য বেশ কয়েকটি সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনাভাইরাসের ঝুঁকি ভাগ করে নেওয়া।’
টুমো পটিআইনেন বলেন, ‘ভাইরাস প্রতিরোধে ও কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ রোধ করতে আইএলও শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) সঙ্গে মিলে একটি কোভিড-১৯ বিষয়ক নির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করেছে। এ ছাড়া আইএলও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য জীবিকা ভাতা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও আয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াও কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে কর্মসংস্থান ধরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে।’
ওই বিবৃতিতে আইএলও সর্বাধিক দুর্বল শ্রমিক ও ব্যবসায়ী, বিশেষত অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ যাঁরা, সেই অভিবাসী ও গৃহকর্মীদের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেছে। অন্যদের মতো এই শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত বলে মনে করে তারা। সেগুলো হলো নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কাজের অনুশীলন সম্পর্কে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনমতো বিনা মূল্যে পিপিইর ব্যবস্থা, জনস্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোতে প্রবেশাধিকার ও জীবিকার অন্য বিকল্পের ব্যবস্থা থাকা।
শ্রমিকদের কাজে নিরাপদে ফিরে আসা নিশ্চিত করতে এবং কাজের ক্ষেত্রে এই মহামারির সময়ে আরও বাধা এড়ানোর জন্য আইএলও কিছু সুপারিশ করেছে ওই বিবৃতিতে। সেগুলো হলো:
১. সব কাজের ক্ষেত্রে বিপদ নির্ধারণ করা। সংক্রমণের ঝুঁকিগুলো নির্ধারণ করা এবং কাজে ফিরে আসার পরও সেগুলো নির্ধারণ অব্যাহত রাখা।
২. প্রতিটি খাত ও প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টতার সঙ্গে অভিযোজিত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে: শ্রমিক, ঠিকাদার, গ্রাহকের মধ্যে কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, কর্মক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিয়মিত মেঝে পরিষ্কার করা, পুরো কর্মস্থল পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজেশনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সরবরাহ করা।
৩. যেখানে প্রয়োজন সেখানে বিনা মূল্যে কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ করা।
৪. কারও মধ্যে লক্ষণ দেখা দিলে তাঁকে পৃথক করা এবং কার কার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা।
৫. কর্মীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান।
৬. সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুশীলন এবং কর্মক্ষেত্রে পিপিইর ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও তথ্য উপাদান সরবরাহ করতে হবে।সূত্র.প্রথমআলো
Facebook Comments