করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ে আতংকের কোন লেশমাত্র নেই সিরাজগঞ্জের ঈদ মার্কেটগুলোতে। বিশ্বজুড়ে মহামারীতে রূপ নেয়া ছোঁয়াচে এই ভাইরাসকে উপেক্ষা করে ভীড় জমিয়ে চলছে বেঁচাকেনা। মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) দুপুরে শহরের প্রধান নিউ মার্কেটসহ এসএস রোডের ছোট-বড় মার্কেটের বিপণী বিতানগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করে একে অপরের গায়ে গা লাগিয়ে পোশাকসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনছেন। ক্রেতাদের সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখার আহবান জানিয়েও ব্যর্থ হচ্ছেন দোকানীরা। তবে ক্রেতাদের ভীড় থাকলেও বেঁচাকেনা অনেক কম বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে সামাজিক দুরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কেনাকাটা করায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন সচেতন মহল।
নিউ মার্কেটে পোশাক কিনতে আসা ছাবিনা বেগম বলেন, ঈদের আর বেশি দেরি নেই। ছেলেমেয়েদের পোশাক তো কিনতেই হবে। তাই করোনার ভয় উপেক্ষা করেই মার্কেটে এসেছি।
আমজাদ আলী, সোহেল মিয়া, আফরোজা খাতুনসহ একাধিক ক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, করোনা আতংকে আর কতদিন বসে থাকবো। মুখে মাস্ক পড়েই আমরা কেনাকাটার জন্য বেড়িয়েছি। সামাজিক দুরুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে এসব ক্রেতারা বলেন, এত লোকের ভীড়ে দুরুত্ব থাকে না। সবাই তাড়াতাড়ি নিজের কেনাকাটা করতে দোকানে ভীড় জমায়।
তৈরি পোশাক বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, দোকানে দূরে দূরে বসার জন্য টুল দিয়েছি। তারপরও বেশি ভীড় জমলে টুলে বসার মতো অবস্থা থাকে না।
শাড়ী ও থ্রি-পিছ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বাঞ্ছারাম পোদ্দার বলেন, আমরা কাস্টমারদের দুরে থাকার জন্য বললেও তারা সেটা মেনে চলছেন না। এতে আমাদেরও সমস্যা হচ্ছে। ভীড় জমলে আমাদের কিছু করার থাকে না।
সায়মা কসমেটিক স্টোরের মালিক সোহেল রেজা বলেন, দোকানের সামনে ক্রেতাদের দাড়ানোর জন্য তিনফুট দূরে চুন দিয়ে গোল চিহ্ন দিয়েছি। সেগুলো মানছেই না ক্রেতারা।
রওশন এন্ড ব্রাদার্সের প্রোপাইটর রওশন হেলাল বলেন ও শিহাব ক্লথ স্টোরের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হাকিম বলেন, দোকানগুলোতে ভীড় থাকলেও বেঁচাকেনার পরিমাণ কম। অন্যান্য ঈদের তূলণায় বিক্রি একেবারেই নগন্য। ক্রেতারা ভীড় জমিয়ে দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যান।
সূচিত্রা ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী দিলীপ কুমার বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবানু নাশক স্প্রে দোকানে রেখেছি। গ্রাহকদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে বলা হচ্ছে এবং কিছুক্ষণ পর পর বসার আসনগুলোতে জীবানুনাশক স্প্রে দেয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির যুগ্ন আহবায়ক নব কুমার কর্মকার বলেন, ঈদ মার্কেট ও রাস্তাঘাটে মানুষের প্রচুর ভীড় করছে। কোন প্রকার সামাজিক দুরুত্ব মেনে চলা হচ্ছে না। এতে করে করোনার সংক্রমণ মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।
বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বরকতুল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জে মহামারীতে রূপ নেয়নি করোনা ভাইরাস। তবে ঈদ মার্কেটের ভীড়ই আমাদের জন্য কাল হয়ে দাড়াতে পারে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশে মার্কেট খোলা হলেও সামাজিক দুরুত্ব নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। শহরের প্রধান সড়ক এস এস রোডের সাথে সংযুক্ত সকল লিংক রোড বন্ধ করা হয়েছে। ক্রেতারা একটি সড়ক দিয়েই যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মার্কেটগুলোতে পুলিশী টহল জোরদার করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমাদের মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির সাথে একাধিকবার আলোচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচার জন্য বলা হয়েছে। তারপরও তারা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তবে এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের বিকল্প কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
Facebook Comments