প্রকাশিত সময় : জুন, ১৩, ২০২০, ০৬:১২ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 647 জনগাজীপুর- করোনা উপসর্গ নিয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরলোকগমন করেছেন এমন খবর এলাকায় চাওর হয়। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষকের সৎকারে পরিবার, নিকট আত্মীয়-স্বজন এমনকি স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন সংগঠনও এগিয়ে আসেনি।
এ ঘটনায় মানবতার প্রশ্নে স্থানীয় এক মুসলিম যুবকের নেতৃত্বে ওই শিক্ষকের গ্রামেরই কিছু মুসলিম যুবক এগিয়ে আসেন প্রিয় শিক্ষকের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। বিষয়টি দেখে ওসব যুবকের প্রশংসা করছেন স্থানীয়রা।
পরলোকগমন করা ওই প্রধান শিক্ষকের নাম হরিলাল দেবনাথ (৫৫)। তিনি জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং একই উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (১০ জুন) দিবাগত রাতে পরলোকগমন করেন শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ। যথারীতি বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকালে তার সৎকারের কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তার সৎকারে এগিয়ে আসেনি স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় বা সনাতন ধর্মাবলম্বী কোনো সংগঠনও। অবশেষে ওই দিন বিকেলে মৈশাইর গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন পালোয়ান নামের এক মুসলিম যুবকের নেতৃত্বে ওই গ্রামের কয়েকজন মুসলিম যুবকের উদ্যোগে হরিলাল দেবনাথের সৎকার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষকের পরিবারের এক সদস্য জানান, করোনা সন্দেহে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাধার মুখে পড়ে মৃতের পরিবার। কিন্তু এ ব্যাপারে হিন্দু সম্প্রদায় বা সনাতন ধর্মাবলম্বী কোনো সংগঠন অথবা কোনো ব্যক্তি এগিয়ে আসেনি। সব বাধা উপেক্ষা করে কবির হোসেন পালোয়ান নামের মৈশাইর গ্রামের স্থানীয় এক মুসলিম যুবকের নেতৃত্বে ওই গ্রামেরই আরও কিছু মুসলিম যুবক তার সৎকারে এগিয়ে আসেন। তিনি একজন মানুষ গড়ার কারিগর ও জীবদ্দশায় হাজার হাজার মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন; অথচ তার সৎকারে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেউ এগিয়ে আসেনি। যা আমাদের জীবনে অনেক বড় একটা শিক্ষা।
স্থানীয়রা বলছেন, ধর্মীয় রীতি মেনে শিক্ষক হরিলাল দেবনাথের সৎকার করতে হিন্দু সম্প্রদায় তথা তার সমাজবাসী এগিয়ে আসার কথা। কিন্তু তিনি করোনায় মারা যাননি। তবে কেন এই মানুষ গড়ার কারিগরের সৎকার সম্পন্ন করে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেয়নি এলাকাবাসী? অবশেষে মুসলিম যুবকরা তার সৎকার করেছেন। এই শিক্ষকের সৎকার সম্পন্ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ওই যুবকরা।
শনিবার (১৩ জুন) সকালে প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথের সৎকারে নেতৃত্ব দেয়া ওই মুসলিম যুবক কবির হোসেন পালোয়ানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর প্রধান শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ একজন ভালো মানুষ ছিলেন। তাই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে স্থানীয় কিছু সংখ্যক মুসলিম ভাইকে সঙ্গে নিয়ে তার সৎকার করেছি। এটি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব ছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, শিক্ষক হরিলাল দেবনাথ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কালীগঞ্জ পৌরসভায় সংক্রমণের হার বিবেচনায় এনে ৪, ৫ এবং ৬ নং ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে ওই এলাকাগুলো পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছে। লকডাউন এলাকার মধ্যে কালীগঞ্জ পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে।
সূত্র.সময়ের কণ্ঠস্বর,
Facebook Comments