শিরোনাম
২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৮, ২০২০, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

পাঠক দেখেছেন 348 জন
 

এদিকে কারখানা খোলা ও ছুটির সময় শিথিল করায় চাকরি রক্ষার স্বার্থে বিশেষত পোশাক কারখানার শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য নির্দেশনা পরিপালনে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় কমপক্ষে ২৯টি পোশাক কারখানায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। খুলে দেওয়া কারখানাগুলোতে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা, স্থায়ী চিকিৎসক ও নার্সের ব্যবস্থা করা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতায় কর্মসূচি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।কারখানা খুলে দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার আরো প্রায় ৩৯৩টি কারখানা উৎপাদনে ফিরেছে। এ নিয়ে দুই দিনে উৎপাদনে যুক্ত হওয়া কারখানার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। প্রতি শিফটে ৩০ শতাংশ শ্রমিক কাজ করছেন। তবে বকেয়া পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন কারণে শ্রমিকরা কাজ করতে রাজি না হওয়ায় কোনো কোনো কারখানায় কিছুটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় কয়েকটি কারখানা খুলে দেওয়ার পর পুনরায় বন্ধ রাখা হয়েছে।

শ্রমিক নেতা আমিরুল হক আমিন  বলেন, সরকারের কোনো নির্দেশনা কারখানা মালিকরা মানছেন না। প্রথম পর্যায়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কারখানাগুলো খোলার কথা থাকলেও উদ্যোক্তারা সাভার ও আশুলিয়ায় কারখানা খুলেছেন। এসব এলাকার বেশির ভাগ কারখানায় আবার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি।

তবে বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি গতকাল আরো জোরদার করা হয়েছে। প্রায় সব কারখানায় শ্রমিকদের হাত ধোয়ার অস্থায়ী কলের ব্যবস্থা দ্বিগুণ করা হয়েছে। নিরাপদ দূরত্ব মেনে একজন করে শ্রমিককে কারখানায় প্রবেশ করানো হচ্ছে।বিজিএমইএর সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, কারখানার প্রবেশমুখে শ্রমিকদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা, কারখানা ভবনের বাইরে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও জুতায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে মনিটরিং টিমও গঠন করা হয়েছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৭১৮টি কারখানা খুলেছে। আগের দিন খোলার তালিকায় ছিল ৪৮০টি। গতকাল গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহ এলাকার শিল্পাঞ্চলে এক হাজার ৮২০টি কারখানা খুলেছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও বেপজার কারখানা মিলে গতকাল পর্যন্ত এক হাজার গার্মেন্ট কারখানা খুলেছে। বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে অন্তত ২৯টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেতন-ভাতা ইস্যুতে ১৮টি এবং অন্যান্য ইস্যুতে ১১টি কারখানায় বিক্ষোভ হয়েছে।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, তৈরি পোশাক কারখানার শত শত শ্রমিক ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে তাঁরা দল বেঁধে হেঁটে এবং রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও মালবাহী যানবাহনে চেপে আসছেন। তাঁদের গন্তব্য ঢাকা, গাজীপুর ও আশুলিয়ার গার্মেন্ট কারখানা। আসছেন টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে। গত রবিবার রাতে ও সোমবার ভোরে রওনা হয়ে আসা এসব শ্রমজীবীর বিরামহীন যাত্রার চিত্র দেখা গেছে মহাসড়কজুড়ে।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পুষ্টকামুরী বাইপাস এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত গার্মেন্টকর্মী হেঁটে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থেকে আসা গার্মেন্টকর্মী সুরিয়া আক্তার বলেন, ‘হাজিরা না দিলে চাকরি থাকবে না। যেখানে গাড়িভাড়া ২০০ টাকা, সেখানে হাজার টাকা খরচ হলেও কাজে যেতে হবে।’ একই এলাকার আরেক গার্মেন্টকর্মী চান মিয়া বলেন, ‘গাজীপুরে কারখানায় কাজে যোগ দিতে আজ (গতকাল) ভোরে রওনা দিয়েছি। আমরা তিনজন এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছি। কিন্তু কখন পৌঁছতে পারব জানি না।’

দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মোস্তাক আহমেদ বলেন, মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ। বিকল্প হিসেবে অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত রিকশায় মানুষ ঢাকার দিকে যাচ্ছে।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মালেক বলেন, কারখানার শ্রমিকরা চাকরি রক্ষার স্বার্থে ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলতে হবে।

গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বকেয়া বেতন ও লে অফ থাকা স্টাইলিশ গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার দাবিতে গতকাল গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে শিল্প পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন জানান, স্টাইলিশ গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা লে অফ ঘোষণা করে। এর আগে ৩০ জন শ্রমিক ও ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৬০ শতাংশ বেতন বকেয়া ছিল। কারখানা দ্রুত খুলে দেওয়া এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে দুই দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। গতকাল তাঁরা ওই কারখানার আশপাশে চলমান ভলমন্ট ফ্যাশন, ক্রাউন ফ্যাশন ও টেকনো ফাইবার কারখানার শ্রমিকদের কাজ না করার আহ্বান জানান এবং ওই সব কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা তিনটি মোটরসাইকেল ও আটটি বাইসাইকেলে আগুন দেন।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ রুট হয়ে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তাদের বেশির ভাগই গার্মেন্ট ও কলকারখানার শ্রমিক।

সরেজমিনে গতকাল সকালে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চ, সি-বোটসহ বিভিন্ন নৌযান বন্ধ থাকায় ফেরিতে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে আসছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। গার্মেন্ট খুলে দেওয়ায় তারা ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ কলকারখানাপ্রধান এলাকাগুলোতে। তারা বাড়ি থেকে বিভিন্ন যানবাহনে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে ফেরিতে করে পদ্মা পাড়ি দিয়ে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটে আসছে। এখানে বাস না পেয়ে বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে তারা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে।সূত্র.কালের কণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Facebook Comments

     

আরও পড়ুন

ফেরদৌস আক্তার রুনা, রচিত ( কাপুরুষ )

পোশাক শ্রমিকদের হঠাৎ বাড়ি ফেরার হিড়িক

বিজিএমইএ সভাপতি কতৃক শ্রমিক ছাটাই ঘোষণার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে

কথা রাখলেন না গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-দম্পতি

বিজিএমইএ’র অনুরোধ রাখলো না সাভারের অনেক পোশাক কারখানা!

৯০ এর রাজপথ কাপানো জাসদ নেতা হান্নান ক্যান্সারে আক্রান্ত

সাভারে পোশাক শ্রমিকদের ঢিলেঢালা ঈদ উৎযাপন

পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন  তুরাগ থানা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন

কবিতাঃ”হিজুলীর ফুয়াদ চাচা” কবি মোঃ আব্দুল হামিদ

ট্রাকে ঈদযাত্রা: ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় গার্মেন্টসকর্মী মৌসুমীকে

 

Top