প্রকাশিত সময় : সেপ্টেম্বর, ২৬, ২০২০, ০৮:২৭ পূর্বাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 690 জনখাগড়াছড়ির বলপিয়ে আদাম এলাকায় চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে গতকাল মধ্যযুগীয় কায়দায় ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০০৫ সালে ভাইকে এবং ২০০৬ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকেই অসহায় এই নারী মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিলেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।
মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন, আর বলছিলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার অসহায় মানসিক বিপর্যস্ত মেয়েটির? চোখের সামনে মানুষ নামের নরপশুরা আমার অসহায় মেয়েটিকে হাত-পা বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করেছে। মেয়েকে পশুদের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে আমাদেরকেও তারা নির্মমভাবে পিটিয়েছে।’
কান্না করতে করতে এই মা বলছিলেন, ‘এই দেশ কি আমাদের না? আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমার মেয়ের ওপর যারা পাশবিক অত্যাচার করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’
মেয়েটির আত্মীয়রা জানান, ধর্ষকরা ওই এলাকার সেটেলার বাঙালি। তারা নয় জন মিলে অসহায় এই নারীকে ধর্ষণের পর তার বাড়িতেও লুটপাট চালায়। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের মত তিনিও একজন, যিনি জানেন- এই রাষ্ট্র তার সম্ভ্রমহানির বিচার করতে পারবে না।
খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আফসার জানান, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার ৩০০ থেকে ৪০০ গজের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুইটি চেকপোস্ট আছে।
যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান থাকা সত্ত্বেও এ ধরণের ঘটনা ঘটা খুবই দুঃখজনক।’
গত এক মাসের মধ্যে বান্দরবানের লামায় এক ত্রিপুরা নারীকে গণধর্ষণ, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মারমা সম্প্রদায়ের এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় নাজমুল হাসান নামে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাকমা সম্প্রদায়ের ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে।
অভিযুক্ত একজন ধর্ষককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহালছড়ির ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
২০১৮ সালের ২৮ জুলাই খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার নয়মাইল এলাকায় ১০ বছরের শিশু কৃত্তিকা ত্রিপুরা পূর্ণাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মেয়ের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ নিয়ে পূর্ণার মায়ের আহাজারি সেদিন রাষ্ট্রের কানে পৌঁছায়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারাবাহিক নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো জাতিগত নিপীড়নের অংশ বলে মনে করেন স্থানীয়দের অনেকেই।
পাহাড়ে এ পর্যন্ত ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মত জঘন্য যত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটিরই সঠিক বিচার হয়নি, যা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ। বিচার না হওয়ায় পাহাড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে।
পাহাড়িদের অনেকেই মনে করেন, শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে।
চুক্তির এত বছর পরেও সরকার তার প্রতিজ্ঞা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায়, এ অঞ্চলের জুম্ম মায়েরা বার বার আর্তনাদ করেও তাদের সন্তানের সম্ভ্রমহানি ও হত্যার বিচার পাচ্ছেন না।
Facebook Comments