প্রকাশিত সময় : ডিসেম্বর, ২৪, ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 109 জনজামাল উদ্দীন, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি
কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে এবং পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পাঁচ শতাধিক বসতঘরসহ নানা স্থাপনা। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিটের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
নিহতদের একজন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ সি ব্লকের মৃত সুলেমানের ছেলে আবুল খায়ের (৬০)। তবে নিহত শিশুর পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নিহত আবুল খায়েরের ভাতিজা মো. মুজিবুল্লাহ বলেন, ‘কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে জানা নেই। দাউ দাউ করে যখন আগুনে ক্যাম্পের ঘরগুলো জ্বলে যাচ্ছে, সেসময় আমার চাচা বের হতে পারেনি। ঘরে থাকা সব কিছু পুড়ে গেছে। সেসব ঘর পুড়ে গেছে তারা কোনো কিছু বের করতে পারেনি। সব জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এলাকার লম্বাশিয়া ১-ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় বলে জানান, উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম, তিনি বলেন,কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণে চারটি ইউনিট কাজ করে। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে এক শিশুসহ দুই রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, দুপুরে উখিয়ার লম্বাশিয়া ১-ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-ব্লকের একটি বসতঘরে আকস্মিক আগুন লেগে যায়। এতে আগুন ক্যাম্পটির আশপাশের বসতঘরসহ অন্যান্য স্থাপনায় মুহূতেই ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের খবর পেয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প প্রশাসনসহ উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে ৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায়। পরে সেখানে কক্সবাজার ও টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের আরও ৪টি ইউনিট যোগ দেয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর বিকাল ৩টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আগুন লাগার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে পাঁচ শতাধিক বসতঘরসহ নানা স্থাপনা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তদন্ত কাজ শেষে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি তথ্য দিয়ে ফায়ার সার্ভিসে এ কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয়রা ধারণা করছেন—বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা জানতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশও কাজ করছে।
পুনরায় যাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি। ক্যাম্পে লাগা আগুনে ৪-৫শো ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি বলেন, আগুনে পুড়ে এক শিশু ও এক বৃদ্ধ মারা গেছে। আরও চার জন আহত হয়েছেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোছাইন জানান, ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কয়েকশো ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এ ঘটনায় পুলিশ এক রোহিঙ্গা শিশু ও বৃদ্ধের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় আর কয়েকজন আহত হয়েছেন।
Facebook Comments