প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ২৩, ২০২০, ০৬:২৬ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 381 জনশ্রমজীবীর ডেস্ক:বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে বিভীষিকাময় ও পোশাক শিল্পের দ্বিতীয় কালো অধ্যায়ের নাম তাজরিন ট্র্যাজেডি। এ দিনই অগ্নিদগ্ধ হয়ে পুড়ে অঙ্গার হয় ১১৩টি তাজা প্রাণ। আহত হয় প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক। সেই পোড়া গন্ধ এখনো ভুলতে পারেনি শ্রমিকরা। সে দিনের ভয়াল স্মৃতি মনে করে এখনো আঁতকে ওঠেন অনেকেই।
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সেই তাজরীন ফ্যাশনের ভবনটি পোড়া চিহ্ন নিয়ে দাড়িয়ে আছে এখনো। ১১৩ জন শ্রমিকের প্রাণ খেকো সেই ভবনটি দেখে ভয় পায় অনেকে। জরাজীর্ণ ভবনটি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর। অনেক যন্ত্রণা হলেও ভবনের পাশেই নিহতের স্বজন ও আহতের অনেকেই পড়ে আছেন কষ্টের স্মৃতি জড়িয়ে।
ঘটনার ৮ বছর পর সোমবার (২৩ নভেম্বর) সকালে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনের পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘুরে জানা যায়, ভবনের পাশেই অনেক আহত শ্রমিক রয়েছেন একটুখানি সহযোগিতার জন্য। পড়ে আছেন ক্ষতিপূরণ পাবার আশায়। সংসার চালানোর দায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন অনেকেরই শিশু সন্তান। এদের মধ্যে ছোট্ট শিশু রেখে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছেন বাবা-মা দুজনই।
সে দিনের কথা বলতেই জ্বলে চোখ ভিজে আসে আহত শ্রমিক মোহছেনার। তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। নিমিষেই দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে বিল্ডিংটি। ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে শ্রমিকরা। ধোঁয়ায় চোখে কিছু দেখা যায় না। নিচে শুধু শ্রমিক ভাইবোনদের পা দেখা যায়, সে দিকে ধীরে ধীরে যাই। পরে জানালা ভেঙে লাফ দেয় শ্রমিকরা। এ সময় আমিও লাফিয়ে আহত হলেও কোনোমতে প্রাণে বাঁচি। এ ঘটনায় আহত হলেও টঙ্গী মাঠে আমাকে শুধু বেতনের টাকা পরিশোধ করা হয়। ওই টাকা নিয়ে আমি চিকিৎসার জন্য গ্রামে চলে যাই। তাই আমি বেতনের টাকা ছাড়া কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। এখনও দেয়নি। কিছুদিন চিকিৎসা করিয়েছে তবে এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
আহত শ্রমিক রেবা বলেন, প্রতিবছর এই দিন আসলে সাংবাদিক ভাইয়েরা খোঁজ নেয়। বছরে ১ বার হলেও তারা খোঁজ নেয়, কিন্তু আর কেউ কখনো খোঁজ নেয় না। আমরা খুব অসহায় অবস্থায় আছি। কাজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি, কোনো কারখানায় কাজের জন্য গেলে তাজরীনের শ্রমিক হওয়ায় কাজেও নেয় না। ক্ষতিপূরণের আশায় এখন শত কষ্ট করেই এখানে পড়ে আছি।
আহত শ্রমিক শিল্পী বলেন, অনেকেই আর্থিক অনুদান একাধিকবার পেয়েছেন। যারা পাচ্ছেন তারাই বার বার আন্দোলনে যাচ্ছেন। আর যারা এখনও পায়নি তারা না পাওয়ার মধ্যেই রয়ে গেছে। এদের দেখার কেউ নাই। এদের মধ্যে আমিও একজন। যারা কোনো অনুদান পাননি তাদের দিকে সুদৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এলাকাবাসী জানান, সেই একই স্থানে জীর্ণ দশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে ভবনটি। পোড়ার আঁচড় ও কালো দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাজরীনের ভবনটি এখনও আতঙ্কের চার দেয়াল। স্থানীয়দের দাবি এই পোড়া চিহ্ন নিশ্চিহ্নের। আর তারা আর্তনাদের এই চিহ্ন দেখতে চায় না। অচিরেই ভবনটি সংস্কার অথবা অপসারণের দাবি জানান তারা।
বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সরোয়ার হোসেন বলেন, আহত ও নিহতের কাউকেই এখনও কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। যা দেওয়া হয়েছে তা আর্থিক অনুদান মাত্র। অতি দ্রুতই ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান তিনি।
Facebook Comments