শিরোনাম
  মধুপুরে অবৈধভাবে মাটিকাটার অপরাধে ১লক্ষ টাকা জরিমানা       মধুপুরে চালু হয়েছে নারী উদ্যোক্তা পারুলের ঢাকা রেস্টুরেন্ট       মধুপুরে বাল্য বিবাহ সংগঠিত করায় মোবাইল কোর্টে জরিমানা       সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিদিন অভিযান চালাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত       মধুপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন       ঢাকা ফিরতে শুরু করেছে গার্মেন্ট শ্রমিকসহ, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ       তেজগাঁওয়ে যমুনা এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত       ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তাবান অর্পণ       মধুপুরে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে ছত্রভঙ্গ       মধুপুর উপজেলা নির্বাচনে সর্বমোট ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল  করেছেন    
২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৪, ২০২০, ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

পাঠক দেখেছেন 260 জন
 

লেখক: আবু সালেহ

বিএ [অনার্স] আল কুরআন; ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

সম্পাদনায়: মাওলানা মুফতি শাহাদাত হুসাইন
বিএ [অনার্স], এমএ [মাস্টার্স] আল হাদিস; ইফতা, জামআ আরাবিয়্যাহ।

বিশিষ্ট বক্তা ও গবেষক

রমজান শব্দটি আরবি رمضان‎‎ [রমাদ্বন] এর ভিন্ন রূপ। رمضان‎‎ [রমাদ্বন] শব্দটি رمض
[রমদুন] শব্দ থেকে যার আভিধানিক অর্থ দগ্ধ করা, পোড়ানো, বিনাস করা ইত্যাদি। এটি
ইসলামী বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলিমগণ রোজা পালন করে
থাকে।
 পারিভাষিক সংজ্ঞায় রমজান হলো: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বান্দার যাবতীয়
অন্যায় ও ত্রæটিপূর্ণ কাজ যে পন্থায় বিনাস করেন তাকে رمضان‎‎ [রমাদ্বন] বলে।
 আভিধানিক অর্থে রোজা [সওম]: রোজাকে আরবিতে বলে সওম صوم [সওম]। অর্থ বিরত
থাকা, পরিহার করা বা উপবাস ইত্যাদি।
 পারিভাষিক দৃষ্টিকোন থেকে সওম হলো : খাদ্য, যাবতীয় পানাহার, অশ্লীল দৃষ্টি ও
আলাপ, অশ্লীল শ্রবণ ও স্ত্রী সংগম থেকে বিরত থাকাকে বলে সওম।
রমজান হলো সংযম সাধনার মাস। খোশ আমদেদ মাহে রমজান, আল্লাহ তা’আলার অধিক
থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের সেরা সময়। ড
আল্লাহ বলেন: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেভাবে ফরজ করা হয়েছিলো
তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার [ আল
কুরআন ২:১৮৩]
 হাদিসের আলোকে রমজান:
১) হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যে
ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবসহ [ ছোয়াবের প্রত্যাশা ] রমজান মাসের রোজা পালন করবে, তার
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারী: ৩৮, সহিহ মুসলিম:৭৬০)
২) হযরত সাহল বিন সাদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন,
জান্নাতের একটি দরজা আছে, একে রাইয়ান বলা হয়, এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন
একমাত্র রোজাদার ব্যক্তিই জান্নাত প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই পথে প্রবেশ
করবে না। সেদিন এই বলে আহবান করা হবে রোজাদারগণ কোথায়? তারা যেন এই পথে প্রবেশ
করে। এভাবে সকল রোজাদার ভিতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অত:পর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করেবে না। (সহিহ বুখারী: ১৮৯৬, সহিহ মুসলিম: ১১৫২)
৩) হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, রোজা
ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন রোজা পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা

বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে অথবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায় সে যেন বলে,
আমি রোজাদার। (সহিহ বুখারী: ১৮৯৪, সহিহ মুসলিম:১১৫১)
৪) হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ
তায়ালা বলেছেন, রোজা ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু
রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন
রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি
দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার । যার হাতে মুহাম্মদের
প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও
সুগন্ধি। রোজাদারের জন্য রয়েছে দুটি খুশি, যা তাকে খুশি করে। যখন যে ইফতার করে, সে খুশি
হয় এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত
হবে।
(সহিহ বুখারী: ১৯০৪, সহিহ মুসলিম:১১৫১)
৫) হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন,
তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বারাকতময় মাস। আল্লাহ তায়ালা
এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে
যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড়
শয়তানগুলোকে আটক রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের
চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণলাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই
বঞ্চিত ব্যক্তি।
(সুনানুন নাসায়ী:২১০৬)
 রমজান মাসের আমল সমূহ:
১] কুরআন শিক্ষা দেওয়া: রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের
মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় [সহিহ
আল-বুখারী : ৫০২৭]
যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দিবে, যত তিলাওয়াত হবে তার সাওয়াব সে
পাবে [সহিহ কুনুযুস সুন্নাহ আন-নবুবিয়্যাহ : ০৭]
২] সাহরী খাওয়া: সাহরীর খাবার গ্রহণকারীকে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ফেরেশতারা স্মরণ
করে থাকেন [মুসনাদ আহমাদ : ১১১০১, সহিহ]
৩] সালাতুত তারাবীহ পড়া: হাদীসে এসেছে: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব হাসিলের আশায়
রমজানে কিয়ামু রমজান (সালাতুত তারাবীহ) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে
দেয়া হবে [সহিহ আল-বুখারী : ২০০৯]

তারাবীহ এর সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থীরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবীহ
জামায়াতের সাথে আদায় করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আছে: যে ব্যক্তি ইমামের
সাথে প্রস্থান করা অবধি সালাত আদায় করবে (সালাতুত তারাবীহ) তাকে পুরো রাত কিয়ামুল
লাইলের সাওয়াব দান করা হবে [সুনান আবূ দাউদ : ১৩৭৭, সহিহ]
৪] কুরআন তিলাওয়াত বেশি বেশি করা: রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি
নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি
হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ [সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহিহ]
৫] শুকরিয়া আদায় করা: রমজান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্য । সেজন্য আল্লাহ তাআলার
বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমজান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা।
রমজান সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে: আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি
তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা
শোকর কর [সূরা আল বাকারাহ : ১৮৫]
৬] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা: এ মাসে একটি ভাল নেক কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক
বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি নেক কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: এ মাসের প্রত্যেক রাতে
একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, “হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি
আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি
জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন
[সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪]
৭] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবি
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের
সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত [সহিহ মুসলিম : ২৮১২]
৮] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা: এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে
হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান করা।
হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এ মাসে বেশি বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন আর
রমজানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেতো [সহিহ আল বুখারী : ১৯০২]
৯] উত্তম চরিত্র গঠনের চেষ্টা করা: রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও ঝগড়া থেকে বিরত থাকে।

রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে সে যেন বলে,
আমি রোযাদার [সহিহ মুসলিম : ১১৫১]
১০] ইতিকাফ করা: ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ইতিকাফ করতেন। আবূ হুরায়রা
রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: প্রত্যেক রমজানেই তিনি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন।
কিন্তু জীবনের শেষ রমজানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন । দশ দিন ইতেকাফ করা
সুন্নাত। [সহিহ আল বুখারী : ২০৪৪]
১১] লাইলাতুল কদর খোজা: রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে
উত্তম। যাকে লাইলাতুল কদর বলে। আল-কুরআনের ঘোষণা: কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও
উত্তম [সূরা কদর : ৪]
হাদীসে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াব
পাওয়ার আশায় লাইলাতুল কদরের ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া
হবে [সহিহ আল বুখারি : ৩৫]
এ রাত পাওয়াটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: রসূল
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমদানের শেষ দশ দিনে অধিক
পরিমানে পরিশ্রম করতেন [সহিহ মুসলিম : ১১৭৫]
লাইলাতুল কদরের দো‘আ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবি ! যদি আমি
লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব ? রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, বলবেঃ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي.
অর্থ: হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।
[সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩]
১২] বেশি বেশি দোআ ও কান্নাকাটি করা: দোআ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। হাদীসে এসেছে:
ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ রাববুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।
মুক্তির এ প্রক্রিয়াটি রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে [আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩]
১৩] ইফতার করা: সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন
বিলম্ব না করা । কেননা হাদীসে এসেছে: যে ব্যক্তি রোজা পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে
ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র
[সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহিহ]

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন : পিপাসা নিবারিত
হলো, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল। [সুনান আবূ
দাউদ: ২৩৫৯, সহিহ]
অপর বর্ণনায় যে এসেছে- হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোযা রেখেছি, আর তোমারই রিযিক
দ্বারা ইফতার করছি। এর সনদ দুর্বল। আমাদের উচিত সহিহ হাদীসের উপর আমল করা।
[সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮]
১৪] ইফতার করানো: অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন
কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। কেননা হাদীসে এসেছে: যে ব্যক্তি
কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের
সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমালো করা হবে না [সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহিহ]
১৫] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা: তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ
আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। রমজান মাসে তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে
আল্লাহ খুশী হন। আল-কুরআনে এসেছে: হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর,
খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং
তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত [সূরা আত
তাহরীম : ৮]
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট
তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ
করে থাকি [সহিহ মুসলিম : ৭০৩৪]
১৬] তাকওয়া অর্জন করা: তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয়
পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমজান মাস তাকওয়া
নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম। কুরআনে এসেছে: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের
উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে
করে তোমরা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো [সূরা আল বাকারাহ : ১৮৩]
১৭] ফিতরাহ দেয়া: এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাত
আদায়ের পুর্বে ফিতরাহ আদায় করার আদেশ দিলেন। [সহিহ আল-বুখারী :১৫০৩]

১৮] খাদ্য খাওয়ানো: রমজান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে রোজা পালনকারী গরীব,
অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ । কুরআনে এসেছে: তারা খাদ্যের প্রতি
আসক্তি থাকা সত্তে¡ও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। [সূরা আদ দাহর: ৮]
এ বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে: আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত,
একজন লোক এসে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন,
ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও
অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া [সহিহ আল-বুখারী : ১২]
অপর বর্ণনায় বর্ণিত আছে যে, যে কোনো মুমিন কোনো ক্ষুধার্ত মুমিনকে খাওয়াবে, আল্লাহ
তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। [বাইহাকী, শুআবুল ইমান : ৩০৯৮, হাসান]
১৯] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা: আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর
তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন: আর তোমরা আল্লাহর
তাকওয়া অবলম্বন কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আরও তাকওয়া
অবলম্বন কর রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর
পর্যবেক্ষক। [সূরা আন-নিসা: ১]
২০] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা: কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা
আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত
বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। কুরআনে এসেছে: নিশ্চয়
আমি কুরআন নাযিল করেছি, আর আমিই তার হিফাযতকারী [সূরা আল-হিজর: ৯]
২১] আল্লাহর যিকর করা: এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
আল্লাহ তাআলার চারটি বাক্যকে বিশেষভাবে নির্বাচিত করেছেন, তাহলো যে ব্যক্তি পড়বে,
তার জন্য দশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি পড়বে, তার
জন্য বিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর বিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি
আন্তরিকভাবে পড়বে, তার জন্য ত্রিশটি সাওয়াব লেখা হয়, আর ত্রিশটি গুনাহ মিটিয়ে দেয়া
হয়। [মুসনাদ আহমাদ : ১১৩৪৫]
২২] মিসওয়াক করা: মেসওয়াকের প্রতি রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ
গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে: অর্থাৎ মেসওয়াক মুখের জন্য পবিত্রকারী, এবং
রবের সন্তুষ্টি আনয়নকারী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রেখে মেসওয়াক
করতেন বলে বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। [সহিহ ইবন খুযাইমাহ : ১৩৫]

২৩] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো: রমজান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো
একটি উত্তম ইবাদাত। ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে:
জিবরাইল আলাইহিস সালাম রমজানের প্রতি রাতে রমজানের শেষ পর্যন্ত রসূল সল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসূল তাকে কুরআন শোনাতেন। [সহিহ
আল-বুখারী : ১৯০২]
২৪] কুরআন বুঝা ও আমল করা: কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ
ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা। এ বিষয়ে কুরআনে নির্দেশ দেয়া
হয়েছে: তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর
এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করা
[সূরা আল-আরাফ : ৩]

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Facebook Comments

     

আরও পড়ুন

মধুপুরে অবৈধভাবে মাটিকাটার অপরাধে ১লক্ষ টাকা জরিমানা

মধুপুরে চালু হয়েছে নারী উদ্যোক্তা পারুলের ঢাকা রেস্টুরেন্ট

মধুপুরে বাল্য বিবাহ সংগঠিত করায় মোবাইল কোর্টে জরিমানা

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রতিদিন অভিযান চালাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত

মধুপুরে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর শুভ উদ্বোধন

ঢাকা ফিরতে শুরু করেছে গার্মেন্ট শ্রমিকসহ, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ

তেজগাঁওয়ে যমুনা এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তাবান অর্পণ

মধুপুরে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে ছত্রভঙ্গ

মধুপুর উপজেলা নির্বাচনে সর্বমোট ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল  করেছেন

ফেরদৌস আক্তার রুনা, রচিত ( কাপুরুষ )

পোশাক শ্রমিকদের হঠাৎ বাড়ি ফেরার হিড়িক

বিজিএমইএ সভাপতি কতৃক শ্রমিক ছাটাই ঘোষণার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে

কথা রাখলেন না গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-দম্পতি

বিজিএমইএ’র অনুরোধ রাখলো না সাভারের অনেক পোশাক কারখানা!

৯০ এর রাজপথ কাপানো জাসদ নেতা হান্নান ক্যান্সারে আক্রান্ত

সাভারে পোশাক শ্রমিকদের ঢিলেঢালা ঈদ উৎযাপন

পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন  তুরাগ থানা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন

কবিতাঃ”হিজুলীর ফুয়াদ চাচা” কবি মোঃ আব্দুল হামিদ

ট্রাকে ঈদযাত্রা: ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় গার্মেন্টসকর্মী মৌসুমীকে

 

Top