প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ১৯, ২০২০, ০৯:১৯ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 692 জনফেব্রয়ারি মাসের বেতন দেয়নি, মার্চ মাসের বেতনও দেয়নি। এই দুই মাসের কাজ তো ঠিক ঠাক মত করতে হলো। কিন্তু মালিক বেতন দেয় না কেন? ঘরে চাল নাই, বাজার করবো টাকা নাই। আমরা কি খাই না? নাকি না খেয়েই বেচে থাকি? ‘
‘সব কারখানার বেতন হয় কিন্তু আমাদের কারখানায় বেতন দেয় না। আমরা কি মানুষ না? নাকি আমরা রোবট? মালিকরা কি মানুষ না? তারা কি আমাদের এই কষ্ট বুঝে না?’
রোববার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জিরাবো-বিশমাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আশুলিয়া কাঠগড়ায় এলাকায় অবস্থিত পেন্টাফোর্থ কারখানার শ্রমিকরা। এ কারখানার প্রায় ৩০০ শ্রমিক গত ফেব্রয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন-ভাতা পাবে। তাই সামাজিক দুরুত্বের কথা না ভেবে ঝুঁকি নিয়ে আজ সকাল থেকে এ আন্দোলন শুরু করে তারা।
ঘটনা স্থলে সরজমিনে গেলে কারখানাটির আন্দোলনরত শ্রমিক সুমি ও ফারজানা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
তারা জানান, তারা যে টাকা পাবে, তাদের যেন সে টাকা পরিশোধ করা হয়৷ তারা যেন সে টাকা দিয়ে কিছু দিনের জন্য হলেও খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে৷ কারখানার মালিক তাদের বেতন দেবে দেবে করে আর দেই নি। তাই তারা আজ সকাল থেকে কারখানার সামনে সড়ক বন্ধ করে বসে আছে।
ক্ষুব্ধ হয়ে সুমি কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদেই ফেলেন। পরে কান্না থামানোর চেষ্টা করে জরিত কন্ঠে তিনি বলেন, ঘরে চাল নাই, কোনো টাকা নেই, খেতে পারি না ছেলেদের খাওয়াতে পারিনা, রুম ভাড়া দিতে পারি না, আবার মানুষের কাছে চাইতেউ পারি না। এমন অবস্থায় আমরা কোথায় যাবো ভাই। আপনারাই বলেন। আমরা তো না খেয়েই মরে যাবো।
সুমির পাশেই দারিয়ে আছে ফারজানা, তারা দুজনই পেন্টফোর্থ কারখানা অপারেটর। ফারজানাও বলে উঠেন বাড়িওয়ালা বাসা থেকে বের হতে দেয় না। কিন্ত বাড়িতে যে খাবার নেই, সেই খাবার তো আর বাড়িওয়ালা দেয় না উল্টো আরও বাড়ি ভাড়া চায়। করোনার ভয় আমাদের মধ্যেও আছে। করোনার ভয়ে ঘরের ভেতর বসে থাকলে তো না খেয়েই আমি ও আমার পরিবার মরে যাবো৷
অন্যদিকে একই সড়কে এক কিলোমিটার দুরে আন্দোলন করতে দেখা গেছে পি এস নিট ওয়ার লিমিটেডের শ্রমিকদের। তারা প্রতিবেদককে বলেন, করোনা জন্য কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পর কারখানার মালিক কখনো শ্রমিকদের খোঁজ খবর নেই নি। এবং সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বেতন পরিশোধ করেন নি। তারা বেতন ছাড়া সড়ক থেকে যাবে না বলে জানিয়েছে।
এছাড়া সাভার ও আশুলিয়া মিলিয়ে প্রায় চারটি কারখানায় আজ বেতনের জন্য অবস্থান ও বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা।
নির্দিষ্ট সময়ে বেতনের ব্যপারে স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আল কামরান বলেন, সাভার ও আশুলিয়ার কিছু কিছু করখানার মালিক সরকার কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার পরেও তারা বন্ধ করেনি। মালিকরা কোন না কোনো ভাবে শ্রমিকদের কে দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে সিপমেন্ট করেছেন। সে ক্ষেত্রে বেতন না দেওয়া কোনো যুক্তিকতা দেখছিনা মালিকদের।
তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে শ্রমিকদের ঘরে রাখতে হলে তাদের বেতন দেওয়াটা জরুরি। এখন পর্যন্ত যে কারখানায় শ্রমিকরা বেতন পেয়েছে সে কারখানার একটা শ্রমিকও রাস্তায় নামেনি। তাই মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি শ্রমিদের যেন বেতন পরিশোধ করেন।
Facebook Comments