প্রকাশিত সময় : মে, ১২, ২০২০, ০৮:৫৫ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 689 জনঅনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে শিল্পের চাহিদার কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পোশাক কারখানা চালু করার সুযোগ দিয়েছে সরকার। তবে কোনো কারখানার কর্মী কাজে যোগদানের পর করোনায় আক্রান্ত হলে সেই কারখানা লকডাউন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে স্থানীয় পর্যায়ের শ্রমিক দিয়ে সীমিত পরিসরে কারখানা খোলার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে পোশাক কারখানা খুলেছে। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে, অনেক কারখানায় হাত ধোয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ বেসিনের ব্যবস্থা করেছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে গোল চিহ্ন এঁকেছে।
কিন্ত অভিযোগ রয়েছে, কারখানায় ভেতরে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছে মালিকপক্ষ। তবে শ্রমিকরা কারখানার ভেতর ঢোকার সময় গাদাগাদি অবস্থাতেই ঢুকছে। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়ছে এসব শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরাও।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শ্রম অনুবিভাগ) ড. মো. রেজাউল হক বলেন, পোশাক কারখানা চালু করা থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমাদের কাছে প্রতিটি শ্রমিক মূল্যবান। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো কারখানা সুরক্ষা নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে এবং কর্মীরা এ কারণে করোনায় আক্রান্ত হলে ওই কারখানা লকডাউন করে দেওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে নিয়মিত মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি, শ্রমিক পক্ষের বক্তব্যও আমরা শুনছি। সে হিসাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে গাজীপুরের পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে- শ্রমিকরা কারখানার বাইরে থাকুক আর ভেতরে থাকুক একজন আক্রান্ত হলেই কারখানা লকডাউন হয়ে যাবে।
বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শ্রমিক নেতারা। এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, করোনার প্রকোপের মধ্যে শিল্প-কলকারখানা, গার্মেন্টস খুলে দেওয়াকে আমরা প্রথম থেকেই বিরোধিতা করে আসছি। মালিকপক্ষ যেহেতু একপ্রকার জোর করেই কারখানা চালু করেছে, অবশ্যই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জীবিকা ও অর্থনীতি সচল রাখার জন্য মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে আপস করাকে আমরা সমর্থন করি না।
তিনি বলেন, শুধু কারখানার ভেতরে নয় তারা যেন বাসায় ফিরেও সংক্রমিত না হয় এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও যেন সংক্রমণ ঝুঁকিতে না থাকে, সেজন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে হবে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব হতে পারে। দেশে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব ক্রমবর্ধমান থাকায় সম্প্রদায় সংক্রমণ (কমিউনিটি ট্রান্সমিশন) রোধে কারখানা, মার্কেট বা বাজার অন্তত ঈদুল ফিতর পর্যন্ত লকডাউন কঠোরভাবে অব্যাহত রাখার পক্ষে মতামত দেন তারা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখনই লকডাউন শিথিল করা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথার্থ নয়। আমরা দেখছি, অনেক ডাক্তার ও নার্স সতর্ক থাকা সত্ত্বেও এবং মাস্ক ও পিপিই পরেও করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। আর কারখানার মালিকরা বলছেন শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। কিন্তু তারা কতটা পালন করতে পারবে, তা যথেষ্ঠ সন্দেহের বিষয়।
সূত্র.রাইজিংবিডি ডট কম
Facebook Comments