প্রকাশিত সময় : মে, ২, ২০২০, ০৭:৩৫ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 638 জনকক্সবাজারের টেকনাফে পাতাখেকো পোকা পঙ্গপাল নয়, এটি ঘাসফড়িংয়ের একটি প্রজাতি। এমনটি জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তদন্ত দল বলেছে, আগে থেকেই বাংলাদেশে এ ধরনের পোকার অস্তিত্ব রয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের লম্বরী পাড়ায় ‘অচেনা’ পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির গাছপালা ও আঙ্গিনা পরিদর্শন শেষে ঢাকা থেকে আসা তদন্ত দলের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বঙ্গবন্ধু কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে চারটি পৃথক প্রতিনিধিদল যৌথভাবে টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্ত বসত ভিটাটি পরিদর্শন করেন। এসব প্রতিনিধিদলে ১০ জন বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী ছিলেন।
তারা ক্ষতিগ্রস্ত ভিটাটি পরিদর্শন শেষে যৌথভাবে অভিমত দেন, টেকনাফে দেখা দেওয়া ‘অচেনা পোকা’ পঙ্গপাল নয়। এটি সাধারণ ঘাসফড়িংয়ের একটি প্রজাতি। এছাড়া এটি অপ্রধান ক্ষতিকারক পোকা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজমুল বারী বলেন, ‘টেকনাফে দেখা দেওয়া পোকাটি পঙ্গপাল নয়। এটা ঘাসফড়িং, এটা বাংলাদেশেরই পোকা এবং আগে থেকেই আছে। পোকাটি ডিম দেয়। ডিম থেকেই বাচ্চা হয়, বাচ্চাটাকেই নিম বলা হয়। আর নিমটাই এখানে (টেকনাফে) দেখা দিয়েছে। ’
অনেকগুলো ‘নিম’ একসাথে থাকার কারণেই অনেকে এ পোকাগুলোকে ‘পঙ্গপাল’ বলে ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন ড. বারী।
এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘পোকাটি যখন বড় হবে এবং পাখা গজাবে, তখন এটির গায়ে ফোঁটা ফোঁটা দাগের দেখা মিলবে। এ জন্য পোকাটিকে ‘স্পটেড গ্রাস্ফোরও’ বলা হয়। এছাড়া এ পোকাটির একটা ডিফেন্স মেকানিজম রয়েছে। যখন সে বড় হবে এবং অন্যান্য পোকা তাকে খেতে বা ক্ষতি করতে যায়, তখন সে তার মুখ দিয়ে এক ধরনের ফোম নিস্বরণ করে। সেই ফোমটা বিষাক্ত ফোম। বিষাক্ত ফোমের কারণে অন্যান্য পোকা বা শত্রুরা তার কাছে আসতে পারে না। ’
পোকাটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘অলিয়ার্সেস মিলিয়ারিস’ এবং এটি ‘পাইগোডাপেমি’ গোত্রের একটি পতঙ্গ কীট বলে জানান ড. বারী।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের কীট তত্ত্ববিধ ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নির্মল কুমার দত্তও টেকনাফে দেখা দেওয়া পোকাটি ‘বিধ্বংসী পোকা পঙ্গপাল’ নয় দাবি করে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্তদলের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে বিধ্বংসী পোকা পঙ্গপাল নয় বলে শনাক্ত করেছে। এটি ঘাসফড়িং বা ঘাসফাড়িরই একটি প্রজাতি।
তিনি বলেন, ‘এটি আসলে বনজ, ফলজ এবং ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ফসলের অপ্রধান ক্ষতিকারক পোকা। এটা তেমন কিছু ক্ষতি করে না। অল্প কিছু ক্ষতি করতে পারে। ’
এ পোকাটি নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই মন্তব্য করে এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “এ পোকাটি অতি আগে থেকেই বাংলাদেশে রেকর্ডেট পোকা, যা টেকনাফের স্থানীয়দের কাছে ‘বর্মাচন্ডালী’ হিসেবে পরিচিত। ’
এ ধরনের পোকা বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে আগে থেকে অস্থিত্ব রয়েছে বলে জানান ড. নির্মল।
সাধারণ কীটনাশক বা বালাইনাশক ছিটিয়ে এ পোকা দমন করা সম্ভব হয় বলে মন্তব্য করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঢাকাস্থ খামারবাড়ীর উপ-পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, টেকনাফে কথিত অচেনা পোকা দেখা যাওয়ার ঘটনা ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করা হলে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাধারণ কীটনাশক বা বালাইনাশক ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে কার্যকর ফলও পাওয়া গেছে। এখন তদন্তে আসা বিশেষজ্ঞরা ক্ষতিগ্রস্ত বসত ভিটায় এসব পোকার উল্লেখযোগ্য সন্ধান পায়নি।
‘সাইফার্মেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করে এটার দমন বা বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছে। পরপর ২/৩ দিন ধরে স্প্রে করার কারণে একটা জীবন্ত পোকাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বসত ভিটার আশপাশেও এ পোকার অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি। ’
তারপরও অন্য কোথাও এ পোকার সন্ধান পাওয়া গেলে সাধারণ কীটনাশক বা বালাইনাশক স্প্রে করে এর দমন রোধ করা সম্ভব হবে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।
স্প্রে করে দমন করার আগে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা কিছু পোকার জীবন্ত নমুনা সংরক্ষণ করেছে জানিয়ে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. পান্না আলী বলেন, সংগৃহিত নমুনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গবেষণা করে বাংলাদেশে এ পোকার ব্যাপকহারে প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা আছে কিনা তা যাচাই করা হবে। যেহেতু এ পোকা কিছুটা হলেও ফসলসহ ফলজ ও বনজ গাছের ক্ষতি করে থাকে।
পরবর্তীতে গবেষণা লব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে ঘাসফড়িং জাতীয় এ পোকার দমন, বংশ বিস্তার ও আগ্রাসন প্রতিরোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
সূত্র.রাইজিংবিডি ডট কম
Facebook Comments