শিরোনাম
  টাঙ্গাইলে এপ্রিল মাসের মাসিক অপরাধ সভা/২০২৪ অনুষ্ঠিত       মেহেরপুর সদর উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পুস্পস্তবক অর্পণ       আবু বকর সিদ্দিক হাঠাৎ বাড়ী থেকে নিখোঁজ       মধুপুরে বিশ্ব মা দিবস পালিত       সিঙ্গাপুর প্রবাসী রেজাউল করিম ব্যাংকার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ী ফিরলেন       টাঙ্গাইলের মধুপুরে পানিতে ডুবে মাদ্রাসা ছাত্রে মৃত্যু       মেহেরপুরে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করলো স্বামী       টাঙ্গাইলের মধুপুরে শান্তিপূর্ণ ভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পূর্ণ       টাঙ্গাইলের মধুপুরে ভোট দেয়া হলো না মাসুদের       ‌গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ডে ভূ‌ষিত ইস্পাহানি গ্রুপের ৪‌টি প্রতিষ্ঠান    
১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ২৩, ২০২২, ০৭:৩৫ অপরাহ্ণ

পাঠক দেখেছেন 301 জন
 

৩০ বছর আগে বড় ভাই ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে ঝগড়ার পর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সফিউল আলম। পরে পথ ভুলে হারিয়ে যান। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। ১৫ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া সেই সফিউল হঠাৎ তার ১৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভুট্টোজোত পাঠানপাড়া এলাকায় বড় ভাই ইসামইল হোসেনের বাড়িতে ফেরেন সফিউল। এসময় হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইকে বড় ভাই ও ভাবিরা ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। পাশাপাশি ছোটবেলার বন্ধুরাও মালা পরিয়ে সফিউলকে বরণ করে নেন।

সফিউল আলম পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ভুট্টোজোত পাঠানপাড়া এলাকার আকবর আলীর দ্বিতীয় ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে দরিদ্র কৃষক বাবার পরিবারে অভাব অনটন ও ভারপোষণ নিয়ে হঠাৎ সফিউল ও তার বড় ভাই ইসমাইল হোসেনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ভাইয়ের ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সফিউল। ঠিকানা ও পথ ভুলে যাওয়ার তিনি আর বাড়ি ফিরতে পারেননি।

এদিকে সফিউলের পরিবার বিভিন্ন জেলায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। সফিউল আর বেঁচে নেই বলে মনে করেছিল তার পরিবার। ছেলে হারানোর শোকে মারা যান সফিউলের মা সপিলা বেগম।

সফিউল জানান, বাড়ি থেকে বের হয়ে বাসে উঠে চলে যান ঠাকুরগাঁও। সেখান থেকে দিনাজপুর, চট্টগ্রাম ও পরবর্তীতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের হাজিয়ান এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ১২ বছর শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও কোনো পারিশ্রমিক পেতেন না।

ওই চেয়ারম্যানের মৃত্যু হলে সেই বাড়িতে আর টিকতে পারেননি। সেখান থেকে বের হয়ে আশপাশের এলাকার কৃষি ক্ষেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন৷ পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। সেখানে দীর্ঘদিন শ্রমিকের কাজ করার পরে স্থানীয়রা তাকে বিয়ে দেন। বিয়ের পর শ্রমিকের কাজ করে ১০ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেন। বর্তমান তার পরিবারে স্ত্রীসহ তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

সফিউল তার বাড়ির পথ না চিনলেও তিনি বলতেন ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড় এলাকায় তার বাড়ি। তার বড় ছেলে তাওহিদুল ইসলাম তাকে নিয়ে বাড়ির ঠিকানা খোঁজার জন্য বের হয়ে প্রথমে পঞ্চগড় আসেন। দশমাইল নামক এক বাজারে নামলে সেই বাজারের কথা মনে পড়ে সফিউলের।

তিনি তার বাবা-মা, ভাই কিংবা গ্রামের নাম বলতে না পারলেও বড় দুলাভাই ও বড় বোনের নাম বলতে পারতেন। পরে বাজারে দুলাভাইয়ের নাম জিজ্ঞাসা করলে স্থানীয়রা তাকে দুলাভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। এসময় তার বড় বোন ও দুলাভাই সফিউলকে চিনতে পারেন। পরে ভাইদের খবর দিলে বড় ভাই ইসমাইল হোসেন তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সফিউল বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করছি বাড়িতে আসার জন্য কিন্তু ঠিকানা বলতে বা পারায় আসতে পারিনি। ছেলে-মেয়েদের জন্ম সনদের কাগজপত্র প্রয়োজন তাই সাহস করে আমার বড় ছেলে প্রথম আমাকে পঞ্চগড়ে নিয়ে আসে। এখানে এসে দশমাইল বাজারের কথা লোকজনের কাছে শুনতে পাই। পরে মনে পড়ে ওই এলাকায় আমার বড় বোনের বাড়ি। পরে বাসে উঠে ওই বাজারে গিয়ে আমার দুলাভাইয়ের নাম বললে মানুষজন তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। আমার বোন ও দুলাভাইকে আমি চিনতে পারি। তারাও আমাকে চিনতে পারে। পরে আমার বড় ভাই আমাকে বোনের বাড়ি থেকে পৈতৃক ভিটায় নিয়ে আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি অনেক আনন্দিত আজ আমার হারানো ভাই-বোনকে পেয়েছি। আমি তাদের সঙ্গে থাকতে চাই। কিন্তু ঘরবাড়ি তৈরি করার মতো সামর্থ্য নেই। সরকার যদি সহযোগিতা করতো, তাহলে আমার অনেক উপকার হতো।’

সফিউলের বড় ছেলে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা ছোটবেলায় হারিয়ে গেছেন- এটা আমাদের বলতেন। তিনি একেক সময় একেক জেলায় তার বাড়ির কথা বলায় আমরা খোঁজার চেষ্টা করিনি। আমাদের ভাই-বোনদের জন্ম সনদের প্রয়োজন হওয়ায় বাবাকে নিয়ে পঞ্চগড়ে এসে খোঁজখবর নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ির সন্ধান পাই। অনেক ভালো লাগছে দাদার বাড়িতে এসে।’

সফিউল আলমের বড় ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমার মেজো ভাই আমার ওপর অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি আমরা। কিন্তু তার সন্ধান পাইনি। হঠাৎ করে আদরের ভাইকে খুঁজে পেয়ে অনেক আনন্দিত।’

দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সলেমান আলী বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার ৩০ বছর পর সফিউল নামে এক ব্যক্তি তার বাড়িতে ফিরে এসেছেন- এমন খবর পেয়ে প্রথমে গ্রাম পুলিশ ও পরে আমি ভুট্টোজো পাঠানপাড়া এলাকায় যাই। পরে সফিউল ইসলাম ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি- তিনি হারিয়ে যাওয়া সেই সফিউল। সফিউল যদি স্থায়ীভাবে তার পৈতৃক ভিটায় বসবাস করতে চান, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

Facebook Comments

     

আরও পড়ুন

ফেরদৌস আক্তার রুনা, রচিত ( কাপুরুষ )

পোশাক শ্রমিকদের হঠাৎ বাড়ি ফেরার হিড়িক

বিজিএমইএ সভাপতি কতৃক শ্রমিক ছাটাই ঘোষণার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে

কথা রাখলেন না গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ, চাকরিচ্যুত শ্রমিক-দম্পতি

বিজিএমইএ’র অনুরোধ রাখলো না সাভারের অনেক পোশাক কারখানা!

৯০ এর রাজপথ কাপানো জাসদ নেতা হান্নান ক্যান্সারে আক্রান্ত

সাভারে পোশাক শ্রমিকদের ঢিলেঢালা ঈদ উৎযাপন

পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়েছেন  তুরাগ থানা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন

কবিতাঃ”হিজুলীর ফুয়াদ চাচা” কবি মোঃ আব্দুল হামিদ

ট্রাকে ঈদযাত্রা: ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় গার্মেন্টসকর্মী মৌসুমীকে

 

Top