প্রকাশিত সময় : নভেম্বর, ১০, ২০২১, ১২:৩৮ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 1191 জনখুলনার পাইকগাছায় প্রেমিকার আব্দার মেটাতে মোটরবাইক কেনার টাকা যোগাড় করতে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে হত্যা করা হয় কলেজ ছাত্র আমিনুর রহমান সরদারকে (২০)। গলা কেটে হত্যার পর তার লাশ কপোতাক্ষ নদের প্রবল স্রোতের মধ্যে ফেলে গুমের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মুক্তিপণের টাকা নিতে এসে হত্যাকারী ফয়সাল (২২) আটক হওয়ায় ঘটনা ফাঁস হয়।
এদিকে, হত্যাকারী ফয়সাল ঘটনার স্বীকারোক্তি দিলেও কপোতাক্ষ নদে প্রবল স্রোতের কারণে নিহতের মৃতদেহের সন্ধান মিলছিলো না। অবশেষে তিনদিন পর বুধবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে পাইকগাছার আগড়ঘাটা বাজার এলাকা থেকে কলেজ ছাত্র আমিনুরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার (৭ নভেম্বর) পাইকগাছা উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের ছুরমান গাজীর ছেলে ও কপিলমুনি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আমিনুর রহমানকে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী গদাইপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে ফয়সাল। পরে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে ফয়সালকে হত্যা করে আমিনুর।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বদরুল আলম জানান, স্থানীয় আগড়ঘাটা বাজারের অপর প্রান্ত শাহজাতপুরের পার কপোতাক্ষ নদে কলেজ ছাত্র আমিনুরের লাশ পাওয়া গেছে।
ওসি জিয়াউর রহমান জানান, ফয়সাল রংপুর সেনানিবাসের গলফ খেলোয়াড়দের বল টোকানোর কাজ করতো। সেখানে থাকা অবস্থায় একটা মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। প্রেমিকা সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য তাকে ‘আর ওয়ান ফাইভ’ নামে একটি মোটরসাইকেল ক্রয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। এরমধ্যে ওই সেনানিবাসের কর্মকর্তারা তাকে একটি অপকর্মের জন্য বের করে দেয়। রংপুর থেকে পাইকগাছায় চলে আসে সে। কিন্তু প্রেমিকাকে দেওয়া তার ওয়াদা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। কী করবে ভেবে পারছিল না ফয়সাল। পরে টাকা সংগ্রহের জন্য বিত্তবানদের ছেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করতে থাকে সে।
পরিকল্পনা মোতাবেক ধনীর দুলালের খোঁজও পেয়ে যায় ফয়সাল। আমিনুরের পরিচিত একজনকে রক্ত দেওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। আট দিনের পরিচয়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরতর হয়। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন (০৬ নভেম্বর) রাতে আমিনুরকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে আসামি ফয়সাল। পরেরদিন (৭ নভেম্বর) একই স্থানে নিয়ে তাকে জুসের সঙ্গে ১৪ টি ঘুমের ওষুধ পান করায় ফয়সাল। তারা উভয় একসঙ্গে সিগারেট সেবন করে। অবচেতনের ভাব আসলে সে দা দিয়ে প্রথমে আমিনুলের গলায় কোঁপ দেয়। চিৎকার করলে ঘাড়ে আরও একটি কোঁপ দেয়। পরে তাকে টেনে নদীতে ফেলে দেয় ফয়সাল।
হত্যাকাণ্ডের পর ফয়সাল ভিকটিমের মোবাইল দিয়ে তার বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। প্রথমে বিষয়টি তেমন একটি গুরুত্ব দেননি আমিনুরের বাবা সুরমান সরদার। রাতে ছেলে বাড়িতে ফিরে না আসায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। পরেরদিন সকালে বাড়ির সকলে খোঁজ নিতে থাকেন। এরমধ্যে আমিনুরের মোবাইল দিয়ে আবারও ফোন দেয় আসামি ফয়সাল। তখন ডিমান্ড কমিয়ে দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করে সে। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানান নিহতের বাবা। ওসির পরামর্শে টাকা দিতে রাজি হন নিহতের বাবা। অপহরণকারীর পরিকল্পনা মোতাবেক তিনি টাকাটা ভিলেজ পাইকগাছা ব্রিজের পাশে বটগাছের নীচে রেখে আসেন। এর আগে পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে ফেলে। ফয়সাল টাকার ব্যাগ ধরা মাত্র পুলিশের নিকট গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আমিনুরকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে পুলিশের নিকট। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চাইলে মঙ্গলবার (০৯ নভেম্বর) বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামি ফয়সাল খুনের বর্ণনা করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদলতে। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ওই আদালতের বিচারক মো. মনিরুজ্জামান।
ওসি জিয়াউর রহমান আরও জানান, ফয়সালকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আমিনুরকে হত্যা করে দাসহ তার লাশ কপোতাক্ষ নদীতে ফেলে দেন বলে স্বীকার করেছে। এরপর স্বীকারোক্তি মোতাবেক সোমবার ও মঙ্গলবার তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তের দাগ পাওয়া গেলেও কপোতাক্ষ নদীতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও আমিনুরের লাশের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. তাকবীর হুসাইন জানান, হত্যাকাণ্ডের সময় নদীতে স্রোত ছিল। দুদিন পার হলেও লাশের অবস্থান জানা যাচ্ছিল না। অবশেষে স্থানীয় আগড়ঘাটা বাজারের অপর প্রান্ত শাহজাতপুরের পার কপোতাক্ষ নদে কলেজছাত্র আমিনুরের লাশ পাওয়া যায়।
ভাটার সময়ে কপোতাক্ষ নদে স্থানীয়রা তার লাশ দেখে পুলিশকে সংবাদ দেয়। তার লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাইকগাছা থানার ওসি জিয়াউর রহমান।
এ ঘটনায় আমিনুরের বাবা ছুরমান গাজী বাদী হয়ে গ্রেপ্তার ফয়সালসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪/৫জনকে আসামি করে পাইকগাছা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।সূত্র.রাইজিংবিডি
Facebook Comments