প্রকাশিত সময় : এপ্রিল, ২৪, ২০২৪, ০৪:৫৫ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 333 জননিজেস্ব প্রতিবেদক
দেশের ইতিহাসে ভয়াবহ এক ট্রাজেডি ছিল সাভারের রানা প্লাজা ধস। ওই ঘটনার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দায়ের হওয়া মামলাগুলোর এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ভুক্তভোগীরা আজও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাননি, বেশির ভাগ শ্রমিকের পুনর্বাসনও সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।
রানা প্লাজায় নিজের দুই ছেলেকে হারানো রুবি আক্তার জানান, তার বড় ছেলে কাজ করত আট তলায়, আর ছোট ছেলে ছয় তলায়। বড় ছেলের লাশ পেলেও ছোটটি এখনও নিখোঁজ। দুর্বিষহ কষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বড় ছেলে এক ছেলে সন্তান রেখে যায়। তাকে মাদরাসায় পড়াচ্ছি। আমি চায়ের দোকান করে সংসার চালাচ্ছি। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো কোনো কিছু পাইনি। বিচার সেটাও দীর্ঘ ১১ বছরে পেলাম না।
রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক সাজিদ হোসেন বলেন, সেদিনে স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেননি। স্মৃতি হাতড়িয়ে বলেন, দুর্ঘটনার দিন সকাল পৌনে নয়টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন জেনারেটর চালু করলো আর ভবন ধসে পড়লো। আমি চারতলায় চাকরি করতাম। পায়ের কাছে যে মেশিন ছিল, সেটা পায়ে গেঁথে গেলে পড়ে যায়। এর ১০-১৫ মিনিট পর জ্ঞান ফিরলে দেখি ভবনে আটকা পড়েছি। তখন চারদিক থেকে চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসছিল। বের হওয়ার রাস্তা নাই। এভাবে তিন দিন আটকা ছিলাম। পরে উদ্ধারকর্মীরা বের করে আনে।
বর্তমানে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও অসুস্থ। পাঁচ মাস আগে লিভারে সমস্য, রক্ত বমি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে লাখ টাকা খরচ হয়।
ভবনের ছয় তলায় কাজ করা শ্রমিক মরিয়ম ক্ষোভ নিয়ে বলেন, দীর্ঘ এক যুগে কি করল সরকার। বছরের এই দিন হলে নেতারা আসে, ছবি তোলে। আমাদের তো কিছুই দেওয়া হলো না। বিচারও পেলাম না।
দুর্ঘটনা কথা এখনো ভুলতে পারেন না তাসলিমা বেগম। তিনি বলেন, সবসময়ই সেই দিনের কথা মনে পড়ে। আক্ষেপের সুরে তাসলিমা বেগম বলেন, ওই দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যায়। এখন কোনো কাজ করতে পারি না। বোতল কুড়িয়ে পেট চালায়। কেউ আমাদের জন্য কিছু করলো না।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই এখনও শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা বুঝে পায়নি ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তারা।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ধসের মামলার বিচারে সরকারের সদিচ্ছা দরকার। মামলা করেছে সরকার। তারা চাইলে এতদিনে বিচার হতো। ১১ বছরে এ মামলায় ৪৮ বার দিন পড়েছে। গতকাল সরকারের প্রসিকিউটর এক সভায় বলেছেন নানা রকম সমস্যা আছে। সাক্ষী পাওয়া যায় না। তারা বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন, আসা-যাওয়ার খরচ পায় না।
আগামী বছর রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্তি হবে। তার আগে আমরা এ মামলার বিচার চাই, বলেন তিনি।
টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা বলেন, রানা প্লাজা ধসের আজকে ১১ বছর পার হচ্ছে। এখনো শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, সঠিক চিকিৎসা কোনোটাই দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, দুঃখজনক হলো ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা এখনো দিব্যি ব্যবসা বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। আমরা চাই অবিলম্বে রানা প্লাজায় কর্মরত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, চিকিৎসা সেরা নিশ্চিত করা। আর এ ঘটনার সঙ্গে দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক নেতা মিজানুর রহমান মিজান, রেহেনা আহমেদ (ডলি) অনন্যা নেত্রীবৃন্দ।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, রানা প্লাজা ধসের মতো ঘটনা আর যাতে না ঘটে। সেজন্য আমরা নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন করে থাকি।
Facebook Comments