প্রকাশিত সময় : জানুয়ারি, ৩০, ২০২২, ০৮:২৬ অপরাহ্ণ
পাঠক দেখেছেন 559 জনকাফি প্রামাণিক (৪৫)। বর্গা চাষি। বছরে দু’একমাস তাদের সংসার কোনোরকম চললেও বাকি সময়ে অভাব অনটনের সীমা থাকে না। বাড়িতে দুটি ছোট ছেলে রয়েছে। ভাঙা দোচালা ঘরে কোনো রকমে ঠাঁই হয়েছিল তাদের। অজানা এক ঝড়ই কেড়ে নিলো তাদের রাত্রিযাপনের শেষ ঠিকানা।
গত ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের সাহিকোলা গ্রামে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে কাফি প্রামাণিকের বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
কাফি প্রামাণিক বলেন, সেদিন রাতে ঘরে দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। গভীর রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ শর্ট সার্কিটের কারণে ঘরে আগুন লেগে যায় এবং তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঘরে। আগুনের তাপেই ঘুম ভাঙে। সবাই কোনোভাবে জীবন নিয়ে ঘর থেকে ফিরলেও আগুনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়নি কোনোকিছুই। সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়েছে। এমনকি রোপা আমন মৌসুমে অন্যের জমিতে কাজ করে সারাবছর খাওয়ার জন্য ধান সংগ্রহ করে রাখছিলাম, সেগুলোও পুড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, শীতবস্ত্র, নগদ টাকাসহ একটি সংসারে ২০ বছর যাবত তিলে তিলে গোছানো সব আসবাবপত্রই পুড়েছে। কোনো সহায় সম্বল বলতে এখন নেই। সহযোগিতা করার মতো কোনো স্বজনও নেই। কোথায় পাবো ঘর, কে দেবে! বাড়ির ৩ শতক ভিটে ছাড়া আর কোনো জমি নেই। কষ্টে দু’টি ঘর তৈরি করেছিলাম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগুনে ঘর দুটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একেবারে নিঃস্ব অবস্থা তাদের। বর্তমানে কৃষক কাফি প্রামাণিক ও তার স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। গত ৮ দিনে সাহায্য নিয়ে তাদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। তীব্র শীতে খেয়ে-না খেয়ে খুবই কষ্টে দিন পার করছেন।
প্রামাণিক বলেন, প্রতিবেশীরা কিছু চাল, ডাল ও দুটি কম্বল দিয়েছেন। এ অবস্থায় পুড়ে যাওয়া একটি ঘরের ভিটায় প্লাস্টিকের কয়েকটি বস্তা কেটে, সেলাই করে মাথার উপর ছাউনি দিয়ে শীতের রাত কাটাচ্ছি। যদি কেউ একটি নতুন ঘর তৈরি করতে সাহায্য করতেন, তাহলে তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতাম।
তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ উপজেলা প্রশাসনের কাছে একটি ঘর নির্মাণের ব্যবস্থাসহ কিছু গরম কাপড়ের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, ‘আগুনে পোড়ার ঘটনাটি আমি শুনেছি। আমি নিজে পরিবারের পাশে গিয়ে সার্বিক অবস্থা দেখে ব্যবস্থা নেবো।’
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। খোঁজ-খবর নিয়ে পরিবারটিকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।’
Facebook Comments