আল আমিন বিন আমজাদ: দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাখনি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় খনি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় জীবন ও জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন প্রায় ১২শত শ্রমিক। একের পর এক ভ্রান্ত ও অমানবিক সিদ্ধান্তে কর্তৃপক্ষের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। করোনা সংকটের অজুহাতে বার বার কর্তৃপক্ষের খেয়াল খুশি মত বিধি নিষেধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে শ্রমিকদের উপর। অনেকের মতে, প্রতিষ্ঠান সরকারের হলেও সেখানে চলে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি- এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের কর্তৃত্ব। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যা বলে কর্তৃপক্ষ তা-ই বাস্তবায়ন করে। ফলে দিনে দিনে বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ।সরকারের নির্দেশে করোনার বিস্তার ঠেকাতে ২৬শে মার্চ হতে বন্ধ হয় শ্রমিকদের অন্তর্গমন- বহির্গমন। কিন্তু সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী ৬০ শতাংশ বেতন এমন কি বোনাসও দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান “কাজ নাই-বেতন নাই” এই নীতি অবলম্বন করলে শ্রমিকরা কাজের দাবিতে আন্দোলনও করেন।খনি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মত অনুযায়ী বিভিন্ন শর্তে ১২০০ শ্রমিকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৪২৫ জন শ্রমিককে নিয়োগের চুক্তি করে। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, করোনা নেগেটিভ শ্রমিকদেরকে খনির অভ্যন্তরীণ কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন থাকার পর আবারও পরীক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় বার পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হলে তবেই চুড়ান্ত নিয়োগ দেয়া হবে।করোনা নেগেটিভ শ্রমিকরা খনির কোয়ারেন্টাইনে প্রবেশ করলে তাদেরকে চরম অব্যবস্থাপনার সম্মুখীন হতে হয়। এক একটি টিনের ঘরে দশ থেকে পনেরো জনকে গাদাগাদি করে রাখা হয়। ফলে কোয়ারেন্টাইন শেষে পঞ্চাশ জনের মধ্যে প্রায় ২৮ জনের করোনা সনাক্ত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যরাতে খনি হতে বের করে দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে সমলোচনার ঝড় উঠলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৪৭জনকে পার্শ্ববর্তী চৌহাটি,ধাপের বাজার, কালুপাড়া, রজনীগন্ধা ইত্যাদি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোরেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে শ্রমিকদের খোরাকী বাবদ দিন প্রতি ৩০০টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয় ১৫০ টাকা করে। দীর্ঘদিন কোয়ারেন্টাইনে বন্দি থেকে এবং তিন বার পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলাফল হলেও ডিউটি না দেয়ারও অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ গত সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় খনির জেনারেল ম্যানেজার (মাইনিং) মো. বদরুল আলম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিজ নিজ বাড়িতে যেতে বললে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রজনীগন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকা দশ জন শ্রমিক।তারা বদরুল আলমের গাড়ির সামনে ও পেছনে শুয়ে পড়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।খনি শ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত ২৬ জুলাই হতে পরিবার ছেড়ে কোয়ারেন্টাইনে বন্দি আছি। তিনবার করোনা নেগেটিভ হয়েছে। তারপর আবারও কোয়ারেন্টাইনে রেখে আবারও পরীক্ষা করলে ফলাফল পজেটিভ দেখানো হয়।খলিল পুর সর্দার পাড়ার শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, কাজের তাগিদে আমরা ৪০-৫০ দিন ধরে কোয়ারেন্টাইনে আছি। আজ (সোমবার) বদরুল আলম স্যার এসে আমাদেরকে বাসায় চলে যেতে বলেন। আমরা করোনা নেগেটিভ ছিলাম আমাদেরকে পজেটিভ বানিয়ে এখন বাসায় পাঠাচ্ছে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হবে বলে।কর্তৃপক্ষের কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে মামলার ভয় দেখানো হয়। শুধু তাই নয় পার্বতীপুরের জনৈক আমজাদ মাস্তানকে ভাড়া করে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এসময় বেতনের দাবিসহ করোনা মুক্তদের কাজে যোগদান এবং করোনা আক্রান্তদের উপযুক্ত চিকিৎসার দাবি জানান।প্রায় ঘন্টাব্যাপি অবরুদ্ধ থাকেন ডিজিএম (মাইনিং) বদরুল আলম। খবর পেয়ে বড়পুকুরিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. সুলতান মাহমুদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন এবং ডিজিএম বদরুল আলমকে সেখান থেকে যাওয়ার ব্যবস্তা করেন।এ ব্যাপারে জেনারেল ম্যানেজার (মাইনিং) বদরুল আলম বলেন,তাদের জন্য যা বরাদ্দ (খাদ্য বাবদ) তা-ই দেয়া হয়েছে। আমি এককভাবে কিছু বলতে পারব না। খনি কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নিবে তা পরে জানানো হবে।
Facebook Comments